শরণখোলা থেকে সরানো হলো সেই বিতর্কিত ইউএনও সুদীপ্ত কুমার সিংহকে
মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫ ২:০৫ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার বিপক্ষে অবস্থান নেয়া, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির ঘটনায় অভিযুক্ত বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুদীপ্ত কুমার সিংহকে হরিণাকুন্ডু উপজেলায় বদলি করা হয়েছে।
১২ অক্টোবর (রবিবার) সিনিয়র সহকারী কমিশনার সুমাইয়া সুলতানা এ্যানি স্বাক্ষরিত এ বিষয়ক প্রজ্ঞাপনটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
ইউএনওর বদলির সংবাদ উপজেলায় ছড়িয়ে পড়লে মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। সুদীপ্ত কুমার সিংহ ২০২৪ সালের মে মাসে শরণখোলায় যোগদানের পর থেকেই আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়ন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পক্ষ নেয়া এবং জুলাই পরবর্তীতেও ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত অফিসে শেখ হাসিনার লেখা বইপত্র সংরক্ষণ করা,
সরকারি প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করা, ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজিসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে যুক্ত হন। তার অপসারণের দাবিতে শরণখোলায় কয়েকবার মানববন্ধনও করেছেন উপজেলার বাসিন্দারা।
এর আগে বরিশালের হিজলা উপজেলায় থাকাকালীন একই কর্মকাণ্ডের কারণে পানিশমেন্টের শিকার হন তিনি।
বর্তমানে মন্ত্রিপরিষদ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ থেকে তার বিষয়ে তদন্ত চলছে। যদিও বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক সুষ্ঠু তদন্ত করবেন কিনা এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে একটি লিখিতপত্র বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন শরণখোলার তরুণদের একটি প্রতিনিধি দল।
উপজেলার বাসিন্দা জুলাইযোদ্ধা মোঃ রোমানুল ইসলাম বলেন, আমি জুলাইয়ে চোখ হারিয়েছি যাদের কারণে তাদের এখনও বিচার হয়নি এটি আমার জন্য অনেক কষ্টের, তাকে শুধুমাত্র বদলি করলেই হবে না তাকে চাকরিচ্যুত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, খুলনায় প্রশাসনের একটি আওয়ামী সিন্ডিকেট ও কিছু অবৈধ সুবিধাভোগী রাজনৈতিক নেতার কারণে আওয়ামী লীগের দোসরদের বিচার বিলম্বিত হচ্ছে তবে আমরা থেমে থাকবো না। যদি অতিদ্রুত আমরা সমাধান না দেখি তাহলে ঢাকায় বড় পরিসরে আন্দোলন গড়ে তুলবো।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত নিয়ামতুল্লাহ বলেন, আমাদের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় আমরা আমাদের উপজেলাকে কলঙ্কমুক্ত করতে পেরেছি এজন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। আমাদের উপজেলা সুন্দরবনবেষ্টিত অত্যন্ত চমৎকার একটি জায়গা হলেও এখানে সরকারি সকল শাস্তিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পাঠানো হয় এবং তারা এখানে এসে পুনরায় দুর্নীতি শুরু করে, আমরা আগামীতে এরকম কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নিবো না।
সাব্বির নামের একজন ব্যবসায়ী বলেন, আমার পরিবার ইউএনও সুদীপ্ত কুমার সিংহের চাঁদাবাজির শিকার হয়েছে তবে আমাদের উপজেলায় নতুন যে ইউএনও আসবেন তাকে আমরা সবাই সহযোগিতা করবো। কারণ আমি বিশ্বাস করি ব্যক্তি সুদীপ্ত কুমার সিংহ এবং প্রশাসন এক বিষয় নয়, আমাদের দেশে অনেক ভালো কর্মকর্তা রয়েছেন যাদেরকে দীর্ঘদিন ধরে পাওয়ার জন্য আন্দোলন হয়। কিছুদিন আগে আমাদের বাগেরহাটের একটি উপজেলায় এরকম ঘটনা ঘটেছে।
আব্দুর রহিম নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আমরা বৈধ উপায়ে ব্যবসা করার পরও প্রায় ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির শিকার হয়েছি, অর্থাভাবে অনেকদিন তিনবেলা ঠিকমতো খাবারও খেতে পারিনি! আমরা ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে একটি বিষয়ই চাই কোনো সরকারি কর্মকর্তার চাঁদাবাজির কারণে আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের যেন নিঃস্ব হতে না হয়।
১৭৮ বার পড়া হয়েছে