যশোরের বহুল আলোচিত ভাইপো সাঈদ ও তার সহযোগী অপহরণের ঘটনায় এসপি আনিস,টিএসআই রফিক ও আ'লীগনেতা ফুলুর নামে নতুন করে মামলা
বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৫:০৩ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
যশোরের বহুল আলোচিত ভাইপো সাঈদ ও তার সহযোগী শাওনকে অপহরণ, হত্যা ও ঘুমের অভিযোগে তৎকালীন পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান ও ট্রাফিক সার্জেন্ট রফিকুল ইসলাম রফিকসহ দশ জনের বিরুদ্ধে আবারো আদালতে মামলা হয়েছে।
২৪ আগষ্ট রোববার ভাইপো সাঈদের বাবা কাজী তৌহিদুর রহমান খোকন সদর আমলি আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রহমত আলী অভিযোগটি আমলে নিয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী মিলন আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।এটি এই ঘটনার প্রথম মামলা নয়। এর আগে সাঈদ এর মা হীরা বেগম যিনি বর্তমানে প্রয়াত, ছেলের নিখোঁজ ও ঘুমের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। তখন যশোর জেলার এসপি ছিলেন আনিসুর রহমান। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে এসপি আনিস ও টিএসআই রফিক ভয়ভীতি দেখিয়ে হীরা বেগমকে মামলাটি প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছিলেন।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী হীরা বেগমকে জোর করে তৎকালীন স্থানীয় নেতা শাহিন চাকলাদার এর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে আটকে রেখে মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেওয়া হয়। এতে রাজি না হলে তাকে পুলিশ সুপারের কার্যালয় নিয়ে গিয়ে বিদ্যুৎ শক দেওয়া হয় এবং হত্যার হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক মামলাটি প্রত্যাহার করানো হয়।এই ঘটনার পর হীরা বেগম অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং পরে মারা যান।
কাজী তৌহিদুর রহমান খোকনের করা মামলার অন্য আসামিরা হলেন যশোর শহরের শঙ্করপুরের মৃত আনোয়ার হোসেনের ছেলে ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা, পিরোজপুর সদর উপজেলার খামকাটা কৃষ্ণনগর গ্রামের শ্যাম তালুকদারের ছেলে পিরোজপুর জেলা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আখতারুজ্জামান ফুলু মিয়া, রমিজ শেখ, নাসির শেখ,সাইফুল শেখ,হারুন অর রশিদ শেখ এবং আলামিন তালুকদার।
কাজী তৌহিদুর রহমান খোকনে এযাহারে উল্লেখ করেন তাদের পৈতৃক বাড়ি পিরোজপুরের কুমারখালীতে। সেখানে তাদের অনেক সম্পত্তি রয়েছে। আসামিদের মধ্যে গোলাম মোস্তফা এসপি আনিসুল টিএসআই রফিক ছাড়া বাকিরা পিরোজপুরের স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তারা সাধারণ মানুষের উপর নির্যাতন জমি দখল এবং নানা অপরাধে জড়িত।
খোকন জানতে পারেন তার গ্রামের সম্পত্তি আসামীরা দখল করে নিয়েছে। এই খবর পেয়ে তিনি ২০১৭ সালের পহেলা এপ্রিল তার ছেলে সাঈদ কে গ্রামে পাঠান। সেখানে সাঈদ জমি দখলের প্রতিবাদ করলে আসামিরা তাকে খুন যখমের হুমকি দেয়।এর কয়েকদিন পর ৫ এপ্রিল সাঈদ ও তার বন্ধু শাওন যশোর শহরের পৌর পার্কে ঘুরতে গেলে আসামি গোলাম মোস্তফা সহ অন্যদের উপস্থিতিতে টি এস আই রফিক তাদের মারধর করে আটক করেন। এই নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন পুলিশ সুপার আনিস।
খোকন জানান তিনি থানায় গিয়ে কোন সহায়তা পাননি। পুলিশ সুপারের কাছে গেলে তাকে আশ্বাস দেওয়া হয় তার ছেলে সহ দুজনকে আদালতে সোপর্দ করা হবে। এই আশ্বাসের পর টিএসআই রফিক ও গোলাম মোস্তফা তাদের কাছ থেকে ১০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ আদায় করেন।তবে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাদের আদালতে হাজির করা হয়নি।
হীরা বেগমের উপর নির্যাতন ও ভয় দেখিয়ে মামলা প্রত্যাহারের পর সাঈদ ও শাওনকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। কাজী তৌহিদুর রহমান খোকনের অভিযোগ তাদের হত্যা করে লাশ গুম করা হয়েছে। তিনি আরো জানান আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় সে সময় তিনি মুখ খোলার সাহস পাননি। বর্তমান পরিস্থিতি অনুকূল হওয়ায় তিনি ঘটনার আট বছর পর আবার আদালতে মামলা করেছেন।
তৎকালীন এসপি আনিসুর রহমান এর আগেও বিভিন্ন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে পুলিশের চাকরি পাইয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছিল। এছাড়া তার কার্যকালে ক্রসফায়ারের নামে বেশ কিছু বিতর্কিত হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছিল, জানিয়ে তখন জনমনে তীব্র অসন্তোষ ছিল। ভাইপো সাঈদ ও শাওনের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি তখন ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল এবং এর সঙ্গে এসপি আনিসের নাম উঠে আসায় বিষয়টি আরো জটিল রূপ নেয়।
১৬৮ বার পড়া হয়েছে