“মোবাইল টাওয়ার বা ফোনের রেডিয়েশন ক্যানসার সৃষ্টি করে” —ভয়ের ব্যবসা বনাম বৈজ্ঞানিক সত্য
বৃহস্পতিবার , ১৫ মে, ২০২৫ ৪:১৮ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
“মোবাইল টাওয়ারের পাশে বাড়ি কিনবেন না”, “ঘুমানোর সময় পাশে ফোন রাখবেন না”— এমন সতর্কবার্তা আমাদের প্রায়শই শুনতে হয়। অনেকেই মনে করেন, মোবাইল ফোন বা টাওয়ার থেকে আসা রেডিয়েশন ক্যানসার বা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। কিন্তু এই দাবি কতটা সত্য?
আসুন প্রথমে জেনে নেয়া যাক রেডিয়েশন কী এবং এটা কত ধরনের?
রেডিয়েশন বলতে সাধারণত বোঝানো হয় এমন শক্তি যা তরঙ্গ বা কণার মাধ্যমে ছড়ায়। বিজ্ঞান অনুযায়ী, রেডিয়েশন দুই ধরনের:
আয়নাইজিং রেডিয়েশন — যেমন এক্স-রে, গামা রশ্মি, যা DNA-তে পরিবর্তন ঘটাতে পারে ও ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে।
নন-আয়নাইজিং রেডিয়েশন — যেমন রেডিও তরঙ্গ, মাইক্রোওয়েভ, যেটা মোবাইল ফোন ও টাওয়ার থেকে আসে। এটি তাপ উৎপন্ন করতে পারে, কিন্তু DNA ক্ষতি করতে পারে না।
বিজ্ঞান কী বলছে?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), আমেরিকার ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট (NCI) এবং অন্যান্য গবেষণা সংস্থা বারবার বলেছে— মোবাইল ফোন থেকে নির্গত নন-আয়নাইজিং রেডিয়েশন থেকে ক্যানসার হওয়ার কোনো শক্তিশালী বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।
২০১১ সালে IARC (International Agency for Research on Cancer) মোবাইল ফোন রেডিয়েশনকে "2B" গ্রুপে রেখেছে— অর্থাৎ “সম্ভাব্যত ক্যানসারজনক”, ঠিক যেমন কফি বা আচার। কিন্তু এটাও বলা হয়েছে যে, এখনো নিশ্চিত কোনো প্রমাণ নেই।
তবে কি ফোন পুরোপুরি নিরাপদ?
বিজ্ঞানীরা বলেন, ফোন দীর্ঘক্ষণ কান ঘেঁষে ধরে কথা বলা হলে কিছু পরিমাণ তাপ শরীরে ছড়ায়। এটা কিছু সময়ের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে, কিন্তু ক্যানসারের মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগের সাথে এর কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই।
তবে কিছু সতর্কতা মেনে চলা ভালো:
১) কথা বলার সময় হ্যান্ডসফ্রি ব্যবহার করুন।
২) ফোন খুব বেশি গরম হয়ে গেলে ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
৩) শিশুদের অতিরিক্ত ফোন ব্যবহার থেকে বিরত রাখুন।
টাওয়ার কি আরও বিপজ্জনক?
অনেকেই মনে করেন, মোবাইল টাওয়ার অনেক বেশি রেডিয়েশন ছড়ায়। তবে সত্য হলো, টাওয়ারের রেডিয়েশন অনেক দূর থেকে কম শক্তিতে আসে, এবং তা সরকার নির্ধারিত নিরাপদ মাত্রার অনেক নিচে থাকে। বাংলাদেশেও বিটিআরসি এই মাত্রা নিরীক্ষণ করে থাকে।
পরিশেষে বলা যায়, মোবাইল ফোন বা টাওয়ার থেকে নির্গত রেডিয়েশন নিয়ে যেসব ভয় ছড়ানো হয়, তার পেছনে এখনো সুনির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। বরং এই ধরনের ভুল ধারণা অকারণে ভীতি তৈরি করে। সচেতন থাকুন, তবে আতঙ্ক নয়—বিশ্বাস করুন বৈজ্ঞানিক প্রমাণে।
বিজ্ঞানের আলোয় বিভ্রান্তির অন্ধকার দূর হোক।
২৩০ বার পড়া হয়েছে