সর্বশেষ


সম্পাদকীয়

বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষা রূপান্তরে শিক্ষাবিদ ডক্টর জহুরুল ইসলামের অবদান

শাহীন ফকির
শাহীন ফকির

রবিবার, ১১ মে, ২০২৫ ৯:৪৯ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
প্রফেসর ডঃ মো. জহুরুল ইসলাম। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়,কুষ্টিয়া বাংলাদেশের এর আইন বিভাগের সাবেক প্রধান তিনি। যিনি তার মেধা, প্রজ্ঞা, জ্ঞান ও গবেষণা দিয়ে দেশ ও জাতিকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই যুগে অগ্রগামী বাংলাদেশকে ও আগামী প্রজন্মকে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার ক্ষেত্রে ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে সুশিক্ষিত ও আত্মনির্ভরশীল শিক্ষা গ্রহণ করে আগামী প্রজন্মকে সামনের দিকে ধাবিত করার ক্ষেত্রে ডঃ জহুরুল ইসলামের অবদান অনষীকার্য।

ছোটবেলা থেকেই তাঁর মানুষের জন্য কাজ করার প্রবণতা ছিলো।মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে শিক্ষকতা পেশাকে বেছে নেন তিনি। আইন বিভাগের শিক্ষক হিসেবে বর্তমান বাংলাদেশে আইন শিক্ষাসহ উচ্চ শিক্ষায় প্রযুক্তির প্রয়োগ নিয়ে গবেষণা ও এ সম্পর্কে দেশের সাধারণ মানুষ ও নীতি নির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। আইন শিক্ষা থেকে শিক্ষা টেকনোলজিতে রূপান্তরের এক জীবন্ত কিংবদন্তী ড. ইসলাম। শিক্ষা টেকনোলজি নিয়ে গবেষণা ও উচ্চ শিক্ষায় বর্তমানে তিনি অবস্থান করছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ই-লার্নিং ও ওয়েব বেইজড কয়েকটি মডিউল তিনি প্রকাশ করেছেন। তাঁর গবেষণার ফলাফল এইসিটির কনফারেন্স প্রসিডিংসে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর কয়েকটি সাক্ষাৎকার দেশ বিদেশের নামকরা পত্র-পত্রিকা ও নিউজ ব্লগে ছাপা হয়েছে।

তিনি তাঁর মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগকে মডেল বিভাগ হিসেবে তৈরি করেছেন। বিভাগের জন্য সর্বপ্রথম কারিকুলাম তাঁর নেতৃত্বেই তৈরি হয়েছে। আইন শিক্ষাকে সমস্যা ভিত্তিক ও কেইস ভিত্তিক পাঠদানের জন্য গবেষণা করে প্রকাশ করেছেন প্র্রব্লেম হ্যান্ডবুক ও কেস ল হ্যান্ডবুক। বিশ্ব ব্যংকের অর্থায়নে বিভাগে একটা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন এই গুনী শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক শিক্ষার জন্য মুট কোর্ট গ্যালারি ও কারিকুলাম ভিত্তিক প্রথম জুরিস্টিক ক্লিনিক তিনিই প্রতিষ্ঠা করেন। বিভাগের শিক্ষার্থীরা আজ তাঁর কাজের সুবিধা ভোগ করছে। ২০১৪-২০১৭ সালের মধ্যে বিভাগের এই পরিবর্তন সর্বমহলে প্রশংসা পেয়েছে। তৎকালে জাতীয় গণমাধ্যমে একাধিক ফিচার প্রকাশিত হয়েছিলো। দৈনিক যায়যায় দিন পত্রিকায় প্রকাশিত (১৭ আগস্ট ২০১৬, পৃ. ১৩) ফিচার শিরোনাম হয় “ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়-বদলে যাওয়া আইন বিভাগ”। ফিচার লেখক ও সাংবাদিক শাহজাহান নবীন লিখেছেন,

“.. এছাড়া বিভাগে এখন সব থেকে নজরে পড়ার মতো বিষয় হলো অবকাঠামোগত উন্নয়ন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো বিভাগের মধ্যে সর্বাধুনিক এই বিভাগে রয়েছে ডিজিটাল সেমিনার লাইব্রেরি। সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লাইব্রেরিতে রয়েছে উচ্চ গতি সম্পন্ন ইন্টারনেট সংযোগসহ ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব। দেশ-বিদেশ থেকে নানা ধরনের বিখ্যাত আইনি বই পুস্তক সংগ্রহ করে সমৃদ্ধ করা হয়েছে লাইব্রেরিকে। এমনকি প্রত্যেক শিক্ষককের ব্যক্তিগত অফিসেও দেয়া হয়েছে ইন্টারনেট সংযোগসহ কম্পিউটার। বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ অফিস, প্রত্যেকটি শ্রেণিকক্ষ ও করিডোর এখন সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত। এছাড়া মুট কোর্ট ট্রেনিংয়ের জন্য রয়েছে নিজস্ব শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মুট কোর্ট গ্যালারি। যেখানে বিভাগের শিক্ষার্থীদেরকে বিচারক ও পেশাজীবী আইনজ্ঞদের সামনে হাতে কলমে বিচারিক প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান দান করা হয়।”

২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের ১৯ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে জুরিস্টিক ক্লিনিক বাংলাদেশের আইন শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি রূপান্তরমূলক শিক্ষার মাইলফলক। আইন ক্লিনিক, যা জুরিস্টিক ক্লিনিক নামেও পরিচিত, আধুনিক আইনি শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ কারণ তারা ব্যবহারিক শিক্ষার উপর জোর দেয়। অন্যান্য অনেক শাখার বিপরীতে, আইনি শিক্ষা বাস্তব জগতের পরিস্থিতিতে তাত্ত্বিক জ্ঞানের প্রয়োগের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে। জুরিস্টিক ক্লিনিকের অধীনে, শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ব্যবহারিক আইনি কার্যকলাপে জড়িত থাকে, যেমন ক্লায়েন্ট সাক্ষাৎকার নেওয়া, আইনি গবেষণা করা এবং সমাজের বিচারপ্রার্থীদের পরামর্শ প্রদান করা। এই কার্যকলাপগুলি শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ, বিশ্লেষণাত্মক চিন্তাভাবনা এবং সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা প্রদান করে, যা একটি সফল আইনি ক্যারিয়ারের জন্য অপরিহার্য। বাস্তব জীবনের আইনি সমস্যাগুলির সাথে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে, শিক্ষার্থীরা বিচার ব্যবস্থার জটিলতা সম্পর্কে গভীর ধারণা অর্জন করে এবং অর্থপূর্ণ উপায়ে তাদের জ্ঞান প্রয়োগ করতে শেখে।

আইন শিক্ষা উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষা উন্নয়ন এবং গবেষণায় নিবেদিত প্রাণ এই শিক্ষাবিদ তাঁর কর্মময় জীবনে ন্যুনতম বিরতি না নিয়ে ২০১৫ সালে কুষ্টিযাতে প্রতিষ্ঠা করেন রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের এই উদীয়মান বিদ্যাপীঠ ইতোমধ্যে হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আস্থার জায়গা। তাঁরই নেতৃত্বে এই উচ্চ বিদ্যপীঠ শিক্ষা, গবেষণা এবং মানব উন্নয়নে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের শিক্ষার অবারিত সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে এই বিদ্যাপীঠ সুবিধা বঞ্চিত প্রান্তিক মেধাবি জনগোষ্ঠীর শিক্ষা নিশ্চিতকরণে বিশেষভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ভূমিকা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটরা এখন দেশ বিদেশে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে এই বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০২৩ সালে জাগ্রত শিক্ষা এওয়ার্ড অর্জন করেন।

তাছাড়া শিক্ষকগণের প্রশিক্ষণের উপর তিনি সবসময় গুরুত্ব প্রদান করেছেন এবং তিনি নিজেই শিক্ষকগণের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ উদ্দেশ্য ভিত্তিক কারিকুলাম প্রণয়নে অগ্রগামী। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরি কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রোগ্রামের ওবিই কারিকুলাম রয়েছে। শিক্ষা তত্ত্ব ও প্রযুক্তি নির্ভর ইন্সট্রাকশনাল ডিজাইনে রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ অনেকটাই এগিয়ে। এ প্রসঙ্গে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক জনাব মোফরাদ হোসনে বলেন, “অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে আমি প্রফেসর ড. জহুরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে সকল ট্রেনিং প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছি। তাঁর প্রদর্শিত পথে বর্তমানে শ্রেণিকক্ষ পাঠদানে আমি মালটিমিডিয়া ব্যবহার মায়ারের ১২ নীতি মেনে চলার চেষ্টা করি। এতে আমি পূর্বের চেয়ে বেশী স্বাচ্ছন্দ বোধ করি এবং শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে ইতিবাচক ফিডব্যাক পাই। ইহা আমার শিক্ষাকতা জীবনে অত্যন্ত উপভোগ্য অংশ “

চারুকলা বিভাগের শিক্ষক জনাব প্রদীপ সাহা বলেন,“রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে পথচলার এক স্বাভাবিক সম্প্রসারণ ছিল ১০ জুন ২০২৪ তারিখে আইকিউএসি আয়োজিত অনলাইন রিফ্রেসার্স কোর্সে (৯ম রিফ্রেসার্স কোর্স) অংশগ্রহণ। ইউএসএ থেকে সিনক্রোনিয়াস মুডে এই ট্রেনিং কোর্সটি পরিচালনা করেন ড. মো. জহুরুল ইসলাম। এই প্রশিক্ষণের সবচেয়ে প্রভাববিস্তারী পর্ব ছিল: “মালটিমিডিয়া লার্নিং এন্ড স্টডেন্ট এনগেজমেন্ট।” এই সেশনে তিনি আমাদের পরিচয় করিয়ে দেন আধুনিক শিক্ষাতত্ত্বের দৃষ্টিভঙ্গি ও মাল্টিমিডিয়ার বিশ্লেষণাত্মক ব্যবহারের সাথে। রবার্ট গানিয়ে’র “নির্দেশনার নয়টি ঘটনা”, জন কেলারের ”প্রেরণার এআরসিএস মডেল” এবং রিচার্ড মায়ার-এর “মাল্টিমিডিয়া লার্নিংয়ের জ্ঞানীয় তত্ত্ব”। এসব তত্ত্ব শুধু তথ্যভিত্তিক ছিল না, বরং ছিল প্রাসঙ্গিক ও কার্যকর।”

অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, “আমি এখন চেষ্টা করি ক্লাসে প্রজেক্টর, অ্যানিমেটেড ভিডিও, ডিজিটাল স্কেচ ও ইন্টারঅ্যাক্টিভ কনটেন্ট ব্যবহার করতে। শিক্ষার্থীদের চোখে এখন যে উজ্জ্বলতা দেখি, তা নিঃসন্দেহে মাল্টিমিডিয়ার সেই নতুন সংস্পর্শের ফল। শ্রেণিকক্ষ এখন শুধু একমুখী জ্ঞান বিতরণের স্থান নয়; এটি হয়ে উঠেছে একটি প্রাণবন্ত, জিজ্ঞাসাময় ও কৌতূহলোদ্দীপক ক্ষেত্র। শিক্ষার্থীরা এখন আর শুধুই শ্রোতা নয়—তারা হয়ে উঠেছে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী। তারা প্রশ্ন করে, বিশ্লেষণ করে, এবং ক্লাস শেষে বিষয়বস্তু নিয়ে চিন্তা করে।”

ড. ইসলাম বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমন একজন প্রতিনিধি যিনি আইনের শিক্ষক থেকে শিক্ষা টেকনোলজিতে রূপান্তরে এক জীবন্ত শিক্ষাবিদ। বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষায় প্রযুক্তি একীকরণে গবেষণা ও একই সাথে হাতে কলমে শিক্ষা দিয়ে চলেছেন এই কৃতিমান ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষা কর্তৃপক্ষ তাঁর গবেষণা ও পরামর্শ গ্রহণ করলে প্রযুক্তি ভিত্তিক শিক্ষা রূপান্তরে নিশ্চয়ই এগিয়ে যাবে।

২২০ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
সম্পাদকীয় নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন